চাকমা ইউনিকোড এবং আমাদের শিক্ষিত সমাজের অদূরদর্শিতা নিয়ে কিছু কথা।
প্রথমে আলোচনা করি ইউনিকোড ফন্ট কি?
আমাদের প্রতিদিনের সঙ্গী গণকযন্ত্রটি কিন্তু কোন ভাষা, অক্ষর কিংবা বর্ণমালা কিছুই বুঝে না। সে বুঝে শুধু সংখ্যা। একথা শুনে আপনার মনে হয়তো প্রশ্ন জাগছে যদি গণকযন্ত্র শুধু সংখ্যাই বুঝে তবে আমরা কম্পিউটারে A B C D লিখি বা দেখি কিভাবে। আসলে কম্পিউটারে প্রতিটি অক্ষরের জন্য সংখ্যা বরাদ্দ থাকে। কম্পিউটারে কোন লেখা দেখার জন্য ফন্ট প্রয়োজন হয়। ফন্টের কাজ হলো এই সংখ্যাকে ছবির মতো করে দেখানো। ফন্ট ফাইলে প্রতিটি সংখ্যার জন্য একটি করে অক্ষরের ছবি ম্যাপিং করা থাকে। সেজন্যই ফন্ট ফাইলটি ইনস্টল করা না থাকলে আমরা বাক্স দেখি। সাধারনত আমরা যেসব অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করি তার বেশির ভাগই ইংরেজি ভাষায়। সেজন্য ইংরেজি ভাষায় ফন্ট পাওয়া বা কম্পিউটারে ইংরেজির ব্যবহার খুবই সহজ। ঝামেলার শুরু যখন আপনি কম্পিউটারে অন্য কোন ভাষা ব্যবহার করতে চাইবেন। আর সেই ঝামেলাটির সমাধান করার জন্যই ইউনিকোডের আবির্ভাব। এর কাজ হলো বিশ্বের সবগুলো ভাষাকেই গণকযন্ত্রের কাছে গ্রহনযোগ্য করে তোলা। আর এই কাজটি যে প্রতিষ্ঠান করছে তার নাম ‘ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম’। এটি একটি অলাভজনক সংস্থা এবং এর কাজ হলো বিশ্বের প্রতিটি ভাষার প্রতিটি অক্ষরের জন্য একটি করে নম্বর প্রদানের মাধ্যমে একে গণকযন্ত্রের সাথে পরিচিত করে তোলা, সেটা যে প্লাটফর্মের জন্যই হোক, যে প্রোগ্রামের জন্যই হোক, আর যে ভাষার জন্যই হোক ।
বিদ্রঃ- এই লেখাটি প্রজন্মফোরাম থেকে নেওয়া হয়েছে। http://forum.amaderprojukti.com/viewtopic.php?f=22&t=1048
চাকমা ফন্টঃ-
বর্তমানে বাংলাদেশ এবং ভারতে অনেক চাকমা ফন্ট তৈরি হয়েছে। উভয় দেশে সর্বমোট প্রায় ৭/৮ টি চাকমা ফন্ট তৈরি করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে কিছু ফন্টে অনেক ত্রুটি এবং বিতর্ক ছিলো। যার কারনে দু/একটি বাদে তেমন কোন ফন্টই তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি। সেই চিন্তা থেকে আমরা একটি পূর্ণাংগ এবং স্বয়ং সম্পূর্ণ একটি চাকমা ফন্ট তৈরি করার কাজ হাতে নিই। এই কাজে আমাদের আর্থিক সাহায্যে এগিয়ে আসে রাঙ্গামাটি সাংস্কৃতি ইনস্টিটিউট। রাঙ্গামাটি সাংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের রিচার্স অফিসার বাবু শুভ্র জ্যোতির চাকমার সহায়তা নিয়ে “আলাম” নামে একটি আসকি চাকমা ফন্ট তৈরি করা হই। এই আলাম ফন্টটি বর্তমানে বাংলাদেশ এবং ভারতে যথেস্থ সাড়া ফেলেছে। আলাম ফন্টটি নাম করন করেছেন রাঙ্গামাটি সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের রিসার্চ অফিসার বাবু শুভ্র জ্যোতি চাকমা।
আলাম ফন্টটি ডাউনলোড করুনঃ- http://www.hilledu.com ওয়েবসাইট থেকে।
চাকমা ইউনিকোড ফন্টঃ
আমাদের আলাম ফন্ট বা অন্য কোন চাকমা ফন্ট দিয়ে শুধু মাত্র কিছু এপ্লিকেশন প্রোগ্রামে লেখালেখি করা সম্ভব। কারন এই ফন্ট গুলো সবই আসকি ফন্ট। যার কারনে অনলাইন বা ইন্টার্নেটে লেখালেখি সম্ভব ছিলোনা। আমাদের একটিই চিন্তা বাংলা ইন্টার্নেটে লেখালেখি করা সম্ভব হলে চাকমা কেন সম্ভব নই? কাজটি অত্যন্ত জঠিল এবং কঠিন হলেও আমরা শুরু করি চাকমা ইউনিকোড ফন্ট তৈরির কাজ। যোগাযোগ করা শুরু করি বিশ্বের বিভিন্ন নামি দামি প্রতিস্থান “ইউনিকোড কনসোর্টিয়ান, মাইক্রোসফট, ফন্ট ল্যাব সহ বিভিন্ন প্রতিস্থানের সঙ্গে এবং যথেস্থ সহযোগীতাও পেলাম। চাকমা ইউনিকোড এর জন্য আলাদা জায়গা বরাদ্ধ হয় ইউনিকোড ৬.১ ভার্শনে। ইউনিকোড ৬.১ ভার্শন Release হয় ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে।
কিভাবে চাকমা ইউনিকোড ফন্ট তৈরি হলোঃ
আমরা যখন চাকমা ফন্টকে ইউনিকোড তৈরি করার কাজ শুরু করি আমাদের সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দ্বারাই আর্থিক সমস্যা। কারন ফন্ট তৈরি করার জন্য যে সফটওয়্যার দরকার তা অত্যান্ত ব্যয়বহুল। আমরা প্রথমে চেষ্টাকরি তিন পার্বত্য বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে সহায়তার জন্য। কিন্তু চেষ্টা করেও কোন লাভ হলোনা। কারন এতে আছে দীর্ঘ সূত্রতা। সেই সাথে দরকার বড় কোন নেতার হাত এবং অনৈটিক টাকা পয়সার লেনদেন। এ দুইটির মধ্যে আমাদের একটিও করা সম্ভব হইনি বলে বিভিন্ন সোস্যাইল সাইটে দেশ-বিদেশের বিত্তবানদের কাছে থেকে সাহায্য চেয়েছি। যথেস্থ পরিমান সাড়াও পেয়েছি। পাই ৫০ হাজারের মতো দেশ-বিদেশে থেকে সহায়তা পেয়েছি। যারা সহায়তা করেছেঃ- http://uni.hilledu.com/who-help-us/ ৫% সুদে ৬০ হাজার টাকা Loan নিয়ে এবং আমরা ২০ হাজার টাকা নিজের পকেট থেকে খরচ করে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা খরচ করে সফটওয়্যার Pack কিনলাম। সাথে সাথে দিন-রাত কাজ করে ইউনিকোড চাক্মা ফন্ট তৈরি করলাম। নাম দিলাম “রিবেং ইউনি” এই রিবেং ইউনি ফন্ট নিয়ে কালের কন্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার বিপ্লব রহমান দৈনিক কালের কন্ঠে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন।
যাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছিঃ
জুড়াছড়ি উপজেলায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের “বনযোগীছড়া কিশোর-কিশোরী সমিতির কাছে আমরা চির ঋণী হয়ে আছি। এই সমিতি আমাদের সকল ধরনের কাছে সবসময় পাছে আছে। এই বনযোগীছড়া কিশোর-কিশোরী সমিতির আমাদের সহযোগীতা না করলে হইতো চাকমা ফন্টকে ইউনিকোডে করা সম্ভবও হতোনা। সেই সাথে কৃজ্ঞতা প্রকাশ করছি খাগড়াছড়ির সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের পরিচালক বাবু সুসাময় চাকমা (যিনি আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে সঠিক নির্দেশণা দিচ্ছেন), কবি মৃত্তিকা চাকমা ( যিনি চাকমা ফন্ট ডিজাইনে সহযোগীতা করেছেন, কালের কন্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার বিপ্লব রহমান (যিনি সবসময় আমাদের কাজের জন্য অনুপ্রাণিত করছেন) এবং যারা ইউনিকোড ফন্ট তৈরিতে আমাদের আর্থিকভাবে সহযোগীতা করেছেন।
যাদের প্রতি আমরা খুবই হতাশ
চাকমা ফন্টটিকে ইউনিকোডে করার জন্য যখন পরিকল্পণা নিলাম তখন আমরা বিভিন্ন বেসরকারী এনজিও এবং সাংস্কৃতিক বিষয়ক প্রতিষ্ঠানের কাছের সাহায্যর জন্য আবেদন করলাম। খাগড়াছড়ির চাকমা একাডেমী নামে একটি প্রতিষ্ঠান আমাদের অবশ্যই ৩০ হাজার টাকা সহযোগীতা করবে বলে জানায়। এই বিষয়ে মিটিং করে আমাদের অবশ্যই ৩০ হাজাত টাকার চেক পাঠাবেন বলে জানানো হই। তাদের কথা অনুযায়ী আমরা সাথে সাথে ৬০ হাজার টাকা ধার করে কাজটি সমাপ্ত করলাম। তখনই শুনি চাকমা একাডেমী আমাদের টাকা দিচ্ছেনা এবং আমাদের ধান্ধাবাজ, টাকাখোর বলতেও দ্বিধা করেনি। আমি তাদের কাছ থেকে এমন ব্যবহার আশা করিনি।
আরো পার্বত্য অঞ্চলের অনেক বেসরকারী এনজিও আমাদের সহযোগীতা করার জন্য কথা দিলেও কথা রাখেনি। আমাদের জুম্মদের মধ্যে যারা বিশেষ ব্যক্তি তারা এগিয়ে না এলে আমাদের মতো নতুন প্রজন্মরা কিভাবে এগিয়ে যেতে পারবে।
১। চাক্মা ইউনিকোড ফন্ট, সফটওয়্যার এবং টিউটোরিয়াল বই ডাউনলোড করুনঃ- http://uni.hilledu.com/download-ribenguni/
২। ইন্টার্নেটে লেখার জন্য RibengUni কী-বোর্ড লেআউট সফটওয়্যারটি কিভাবে ইনস্টল এবং সেটিংস করবেনঃ- http://uni.hilledu.com/forums/topic/how-to-install-ribenguni-keyboardl-and-settings/
৩। RibengUniBJ চাক্মা ইউনিকোড ফন্ট কিভাবে কম্পিউটারে ইনস্টল করবেনঃ- http://uni.hilledu.com/forums/topic/how-to-font-install/
লিখতে বা সেটিংস করতে কোন সমস্যা হলে আমাদের জানানঃ
জানাতে এখানে ক্লিক করুনঃ– http://uni.hilledu.com/contact-us/
Thanks..once agin jyoti the and all…i'm always with you.
লেখাটি সুন্দর হয়েূছে। হতাশ হওয়ার কোন কারন নেই। এক আর্যমিত্র না থাকলে ক্ষতি কি? আমরাতো আছি।.