পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী নাটক ও কিছু কথা
মৃত্তিকা চাকমা।
সাহিত্যের বহু অঙ্গঁ – কাব্য, গল্প, উপন্যাস, নাটক ইত্যাদি। নাটককে সাহিত্যের কাব্যও বলে। দৃশ্যকাব্য এবং শ্রব্য কাব্যের মিলনে গড়ে উঠে মনোরম নাটক। কাব্যেষু নাটকং রম্যম। রঙ্গ-মঞ্চের মাধ্যমে অভিনয় শিল্পীদের সাহায্যে মানবের চলমান জীবনের সুখ-দুঃখকে যখন সংলাপের বিনিময়ে দর্শকের দৃষ্টি সামনে উপস্থাপিত করা হয় তখন তা হয় নাটক। নাটক মানেই হল নড়া-চড়া করা, অঙ্গ চালনা করা, বা কিছু করা। নাটক মানব জীবনের কথা উচ্চারণ করে। নাটক মানুষের বা মানুষের সমাজের বিচিত্র ঘটনাকে বিধৃত করে। নাটক হল দর্পণ- মানুষের দর্পণ, সমাজের দর্পণ। এই উপমহাদেশেও প্রায় দু’হাজার বছর আগে নাট্য মঞ্চ ছিল। ১৯৭১ খ্রীষ্টাব্দে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর পরই এদেশে তথা এ পার্বত্য অঞ্চলের সমাজ সচেতন সাংস্কৃতিক কর্মীরা জনগণের অংশগ্রহণকে সুনিশ্চিত করার প্রয়াস পান। মৌসুম ভিত্তিক মঞ্চ নাটকে নিয়মিত অভিনয়ের মাধ্যমে তারা অত্র অঞ্চলের গণমানুষের আকাক্সাকে তুলে ধরতে থাকেন। এভাবে ৮০ দশকের প্রথম দিকে জুম ঈসথেটিকস কাউন্সিল (জাক) কর্মীদের সামনে নতুন ভাবনা এসে উপস্থিত হয়; এবং অবিভক্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী সংস্কৃতি চর্চার একটা জোয়ার এসেছিল। এ জোয়ারের প্রধান ভূমিকা পালন করে তৎকালীন ছাত্রসমাজ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের একমাত্র সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘গিরিসুর শিল্পী গোষ্ঠী’। বলতে গেলে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে সংস্কৃতি চর্চার বিকাশ ঘটে নাচে, গানে, পোশাক-পরিচ্ছদে। আনন্দের বিষয় এ ধারা এখনো প্রবাহমান।
স্বাধীনতার দশ বছর পর ১৯৮১ সালের ২৭ ফেব্র“য়ারী একদল পড়–য়া তরুণদের মাধ্যমে জন্ম হয় রাঙ্গামাটি ঈসথেটিক্স কাউন্সিল (রাক) যা বর্তমান জুম ঈসথেটিক্স কাউন্সিল (জাক) নামে পরিচিত। পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের নন্দনতাত্ত্বিক বিষয়গুলোর পাশাপাশি চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, পাংখুয়াসহ ১১টি আদিবাসী ভাষা সংস্কৃতি চর্চার সঙ্গে সঙ্গে নাটক চর্চার ক্ষেত্রে ও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে আসছে। নাটক নিয়ে জাক প্রথম প্রযোজনায় হাত দেয়, তা হলো চিরজ্যোতি চাকমা রচিত ‘‘আনাত্ ভাজি উধে কা-মু’’। উক্ত নাটকের মধ্য দিয়েই জাক নাট্যদলের ভবিষ্যৎ চিত্রও ফুটে উঠে। শুরু থেকে জাক কর্মীরা মনে করে একজন নাট্যকর্মী শুধুমাত্র অভিনেতাই নয়, সে সমাজের সুস্থ চেতনার একজন অধিবাসীও এবং নাটক যেখানে সমাজ বিকাশের একটি সহযোগী হাতিয়ার সেখানে নাট্যকর্মীদের দ্বারা সামজে বৈজ্ঞানিক বিকাশকেও ত্বরান্বিত করা সম্ভব। ‘আনাত্ ভাজি উধে কা-মু’ নাটকের পর তার পরবর্তী বছরই অভিনীত হয় শান্তিময় চাকমার রচিত ‘যে দিনত্ যে কাল’। কালের অনুসারে মানুষের পরিবর্তন ঘটে মন এবং স্বভাবচরিত্র। অসময়ে পরিবর্তন হতে থাকলে সমাজের চোখের দৃষ্টি হয়ে থাকে অন্য কিছু। শান্তিময় চাকমা নাটকের মাধ্যমে সময়কে গুরুত্ব দিতে দেখা যায়। এ ধারাই জাক মঞ্চ নাটকের দিকে এগিয়ে যায়।
ভাষাই নাট্য চর্চার ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে। এর ধারাবাহিকতায় গত ১৯৮৩ সাল থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে যতগুলো নাটক মঞ্চায়ন হয়েছিল তার পরিসংখ্যান এখানে তুলে ধরা হলো-
চলবে………
এই লেখাটির মূল লিংকঃ- এখানে