বিঝু কি
প্রত্যক সমাজেরই নিজস্ব আলাদা-আলাদা সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও বৈচিত্র্য ও বিভিন্ন প্রথা প্রচলিত । ঠিক তেমনি পার্বত্য চট্টগ্রাম চাক্মাদের ঐতিহ্যবাহী উৎসব হলো বিঝু। তিন গোষ্ঠির ভাষার শব্দ মিলে বৈসাবি বলা হয়। ত্রিপুরা ভাষায়- “বৈসু”, মারমা ভাষায়- “সাংগ্রাহ্”, চাক্মা ভাষায়-“বিঝু”, অহমিহাদের ভাষায় “বিহু’ এবং তনচংগ্যা ভাষায় বলা হয় “বিষু।”
চৈত্র মাসের শেষ দুইদিন আর অপর দিকে ১লা বৈশাখকে নিয়ে বিঝু হিসেবে আখ্যায়িত হয়ে থাকে। যথাক্রমে-
ক) ফুল বিঝু
খ) মূল বিঝু
গ) গজ্জ্যাপজ্যা দিন বা গোজ্যা পোজ্যা বিঝু
১। ফুল বিঝুঃ-
ফুল বিঝু দিনটি বাংলা চৈত্র্ মাসের শেষ দিনের আগের দিন পালন করা হয়। চাকমারা এই দিনে সকালে ঘুম থেকে উঠে ঘিলে কোজোই পানি দিয়ে ঘর দোর পরিস্কার করবে। নদীতে ফুল ভাসাবে। ঘরদোর সোনা রূপা ধৌত করবে। ক্ষেত খামার বন-জঙ্গল থেকে তরকারী সংগ্রহ করবে। নানা ধরনের পিঠা তৈরী করবে। সন্ধে বেলায় নদীর ঘাটে বা কুয়ার পাড়ে এবং ঘরের অন্দরে বাহিরে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করবে। বিহারে গিয়ে তথাগত ভগবান বুদ্ধের উদ্দেশ্যে প্রদীপ পূজা করবে। ভিক্ষুদের থেকে পঞ্চশীল প্রার্থনা করবে। সাধারনত এটি বিঝুর প্রথম দিন হলেও এ দিনে কোন খানা-পিনার আয়োজন থাকে না। এই দিনে সুর্যোদয়ের আগে চাক্মা যুবক-যুবতী এবং কিশোর-কিশোরীরা বনের বা বাগানের বিভিন্ন নানা রকম সুগন্ধি ফুল সংগ্রহ করে। ভোরে গোসল করে নতুন কাপড় পরে সংগ্রহ করা ফুল নদীতে প্রদীপ বা মোমবাতি জালিয়ে ভাসিয়ে দেই। ফুল দিয়ে যথা সম্ভব ঘরের বসার রুম ( চাক্মা ভাষায় বলা হয় সিংগোবা) সাজানো হয়।
সকালে কিছু খেয়ে পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন কাজের জন্য ভাগ হয়।
(ক) কেউ বিভিন্ন শাকসব্জি ও ফুলমূল সংগ্রহ করার জন্য বের হয়। সাধারণত পরিবারের কর্তা ও গৃহীনিরা মিলে বনের বিভিন্ন শাকসব্জি ও ফুলমূল সংগ্রহ করে।
(খ) কেউ ঘরের বিভিন্ন বসতবাতি, থালা-বাসন ধোঁয়া-মোছা করে।
২। মুর বিঝুঃ–
বছরের শেষ দিনটিকে মূল বিঝু বা মুর বিঝু বলে। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে স্নান কার্য সম্পাদনের পর গঙ্গায় ফুল ভাসিয়ে দিনের সূচনা করে। তিন দিন ব্যাপী বিঝু অনুষ্ঠানের মধ্যে এই দিনটি হচ্ছে মূল বিঝু বা আসল “বিঝু”। এ দিনে গ্রামের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা দল বেঁধে প্রতি গৃহের উঠানে গিয়ে হাঁস মুরগীদেরকে খাদ্য (আধার) দেয়। তারপর “পাজন” নামক খানা-পিনার শুরু। এভাবে শুরু হয় মূল বিঝুর অনুষ্ঠান। এখানে থাকবে নানা ধরনের পিঠা, মিষ্টি জাতীয় খাবার এবং মদ-জগরা, কানজি।
মুর বিঝুর দিনে বাড়ির ছোট বড় সবাই খুব ভোরে উঠে গোসল করে নতুন কাপড়-চোপড় পরে। গৃহিনীরা বিভিন্ন পিঠা, পাজন তরকারি রান্নার জন্য ব্যস্ত হয়ে পরে। পাজন বিভিন্ন ধরনের সবজি দিয়ে রান্না করা হয়। বিঝুর সময় চাক্মা দের পাজন একটি ঐতিহ্যবাহী তরকারী। এই দিনে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল জাতি অথিতিদের জন্য যথা সম্ভব বিভিন্ন খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।
আকাশে সুর্য কিছু দেখা দিলে ছেলে-মেয়েরা দলে দলে বাড়ি থেকে বাড়িতে গিয়ে বিঝু খেতে যায়। এই ভাবে সারাদিন দলে দলে প্রতিবেশী, যুবক-যুবতীরা প্রত্যেক বাড়িতে গিয়ে খাবার পরিবেশন করে এবং আনন্দ উপভোগ করে।
৩। গজ্জ্যাপজ্জ্যা দিন বা গোজ্যা-পোজ্যা বিঝু
বাংলা নতুন বছরের প্রথন দিনে গজ্জ্যাপজ্জ্যাদিন হিসাবে উৎযাপন করা হয়। মুর বিঝু উৎসব আয়োজন করে পরিশ্রান্ত হওয়ার ফলে উক্ত দিনে সকল নরনারী বাড়িতে বিশ্রাম নেই। গ্রামে বুড়ো-বুড়ি থাকলে গ্রামের কিশোরীরা তাদের গোসল করায়। মূলত চাকমারা এই দিনটিকে বিঝু বলে না। বলে গোজ্যা-পোজ্যা দিন। এ দিনে মূল বিঝুতে যা যা আয়োজন থাকে তা থাকে না। আগের দিনে ভরপেট খেয়ে এদিনে শুধু গরাগরি করে শুয়ে থাকাকে গোজ্যা-পোজ্যা দিন বলে। মানে এক প্রকার ক্লান্তি দূর করার জন্য বিশ্রামে থাকা।
ছবিঃ সত্রং চাক্মা ( দৈনিক সমকাল)
চলবে…………….
এই ওয়েবসাইটটি সম্পূর্ণ নতুন। তাই পোস্টগুলি লিখতে কিছু দিন লাগতে পারে। ধন্যবাদ
Biju
All my fb frnds wellcome…….