মানুষ মানুষের জন্যে – আসুন সংগীতার পাশে দাঁড়াই

সকাল বেলায় একটু সময় পেয়ে ফেসবুকে প্রবেশ করতেই একটা মানবিক আবেদন চোখে পড়লো।সংগীতা দেওয়ানকে বাঁচান। অনুতোষ চাকমা জানিয়েছেন সংগীতা দেওয়ান খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ির মেয়ে এবং তার বড় বোন।

সংগীতা হতে পারে কারোর বোন, কারোর মাসি-পিসি কিংবা কারোর কন্যা। তবে তার সবচেয়ে বড় পরিচিতি সে আমাদেরই লোক।আমাদের জুম্ম সমাজের, এই মানব সমাজের একজন। সে মানুষ। মানুষ মানুষের জন্যে। জেআর কার্বারী জানিয়েছেন, সংগীতা দেওয়ান এক সংগীত প্রতিভা, ও তারুণ্যের প্রতীক।

অনুতোষ চাকমা জানিয়েছেন, সংগীতা এখন বড়ই অসুস্থ। তার একটি কিডনি নষ্ট। আর অন্যটিও সময়মত চিকিৎসা না পেলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।ডায়ালাইসিস করতে হয় প্রতিদিন।বেঁচে থাকার জন্যে এই কষ্ট। বেঁচে থাকার জন্যে এখন প্রয়োজন চিকিৎসা। চিকিৎসার জন্যে প্রয়োজন অনেক। লাখ লাখ টাকা।যেখানে নুন আনতে পান্থা ফুরায় সেখানে কীভাবে লাখ টাকা জোগাড় হবে? এই লাখ টাকা আসবে কোথা থেকে?

কথায় বলে, “যার গায়ের উপর লাগে, তার দুনিয়া আন্ধার”। সংগীতার পরিবার সংগীতার জন্যে কয়েক লাখ টাকা করার জন্যে এখন চারদিক অন্ধকার দেখতে পাচ্ছে। কয়েক লক্ষ টাকা কারোর জন্যে হয়তো কিছুই নয়, কিন্তু সংগীতার জন্যে এই কয়েক লক্ষ টাকাই জীবন, তার জীবন বাঁচানোর জন্যে খুবই প্রয়োজনীয়। কিন্তু সেই টাকা তো গাছে ধরে না, বাঁশে ধরে না। সংগীতার পরিবার এই টাকা পাবে কোথায়? বিপদের সময় যখন কোন দিকে কূল কিনারা পাওয়া না যায়, তখন চারদিক অন্ধকার বলে মনে হয়। সংগীতার পরিবারের জন্যেও এখন সেই অবস্থা।

কিন্তু আমরা তো অন্ধকার যুগের মানুষ নই। আমরা সভ্য যুগের সভ্য মানুষ। সভ্য মানুষ হিসেবে আমরা উচ্চারণ করি – “মানুষ সামাজিক জীব”। সামাজিক জীব হিসেবে আমরা একে অপরের প্রতি দায়বদ্ধ, পরস্পরের সাথে সুখ-দুঃখের সাথী। আপদে-বিপদে আমরা পরস্পরের প্রতি সমব্যথী ও সহযোগী। আপদে-বিপদে পরস্পরের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়াই মানবতা। এই মানবতা জিনিসটা না থাকলে আমরা সমাজে একসাথে বসবাস করতে পারতাম না। তাই তো কালজয়ী শিল্পী ভুপেন হাজারিকা মানবতার জয়গান গেয়ে সুর সাধেন, “মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনের জন্যে/একটু সহানুভূতি মানুষ কী পেতে পারে না, ওগো বন্ধু”।

বন্ধু ও বান্ধবীরা, আমরা সামাজিক জীব বলেই এবং আমাদের সবার প্রতি প্রগাঢ় আস্থা ও বিশ্বাস আছে বলেই অনুতোষ চাকমা তার আদরের বোন সংগীতাকে বাঁচানোর আকুতি নিয়ে ফেসবুকে ও CHTBD-তে হাজির হয়েছে। মানুষ হিসেবে এখন আমাদের সবাইকে সংগীতার পাশে দাঁড়াতে হবে। এটা আমাদের সামাজিক ও নৈতিক দায়িত্ব।

বন্ধু-বান্ধবীরা, আমাদের আদরের বোন সংগীতা এখন বড়ই অসুস্থ।বিছানায় শুয়ে আছে। ভাই হিসেবে, বোন হিসেবে আমরা তাঁকে এভাবে থাকতে দিতে পারি না। সময় থেমে নেই। টাকা যোগাড় করতে আমাদের সবাইকে নামতে হবে, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।

টাকা যোগাড় করা কী খুবই কঠিন? আমরা যদি একটু আন্তরিক হই, স্ব-উদ্যোগে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিই, নিশ্চয় তা কঠিন হবে না। আমাদের একজন বন্ধু তো হিসেব করে দেখিয়েছেন, CHTBD-তে বন্ধু আছেন ৪৬৩৫ জন। প্রত্যেকে ১০০ টাকা করে দিলে ৪৬৩,৫০০ টাকা উঠে আসে। কেবল CHTBD বন্ধুরা নন, আরো অনেক শুভাকাংখী ব্যক্তি আছেন তারাও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন সংগীতার জন্যে।

বন্ধু-বান্ধবীরা, অনেকে হয়তো বেকার, অনেকে ছাত্র, অনেকে হয়তো বিভিন্নবাবে জীবন জীবিকা নির্বাহ করেন। তাই সবাই হয়তো ১০০ টাকা দিতে পারবেন না, তবে অনেকে বেশিও দিতে পারবেন। আসুন না চেষ্টা করি – “আমরা পারি”। জীবন জীবনের জন্যে – এই কথাটাকে সার্থক করে তোলার জন্যে আসুন সংগীতার পাশে দাঁড়াই। আমরা চেষ্টা করলে আমাদের আদরের বোন সংগীতার জন্যে অবশ্যই ১০০ টাকা করে দিতে পারবো। ১০০ টাকা যোগাড় করতে একটু ত্যাগ স্বীকার করি কিছু দিনের জন্যে। যেমন,

১) আমাদের সাপ্তাহিক খাদ্য তালিকা থেকে একদিনের মেন্যূ হতে মাছ বা মাংস বাদ দিতে পারি সংগীতার জন্যে;

২)যারা সিগারেট টানেন, তারা না হয়, সংগীতার জন্যে ২/১ প্যাকেট সিগারেট কম খাবেন;

৩)নিজে টাকা দিতে না পারলেও বন্ধু-বান্ধবী বা অন্যকেও উৎসাহিত করতে পারেন;

৪) এক সপ্তাহের জন্যে ফোনে কম কথা বললেন সংগীতার জন্যে;

৫) জেএসএস-ইউপিডিএফ-কে কিংবা মন্দির-কিয়াং-এ চাঁদা না দিয়ে কিংবা কম দিয়ে সংগীতার জন্যে ১০০ টাকা রেখে দিতে পারি।

এভাবে চেষ্টা করলে, এবং একটু আন্তরিক হলে আমরা অবশ্যই সংগীতার চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে পারবো।

লেখাটা দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে। আব্দুল জব্বারের একটা গানের কলি উল্লেখ করে শেষ করতে চাই, “তুমি কী দেখেছো কভু জীবনের পরাজয়?/দুঃখের দহনে করুণ রোদনে তিলে তিলে তার ক্ষয়”। আমরা জীবনের পরাজয় দেখতে চাই না।দুঃখের দহনে করুণ রোদনে তিলে তিলে ক্ষয় হতে চাই না। আসুন আমরা জীবনের জয়গান গাই, জীবনের জীবনের জন্যে সংগীতার পাশে দাঁড়াই। সংগীতা তাঁর রোগ থেকে তাড়াতাড়ি মুক্ত হয়ে হাসিমুখে আমাদের মাঝে ফিরে আসুক।তাঁর গানের স্বরলিপি নিয়ে আমাদেরকে সে আরো জীবনের জয়গান শোনাক।

সংগীতা দ্রুত আরোগ্য লাভ করুক করুণাঘন বুদ্ধের কাছে এই প্রার্থনা করি।

……………………………………………..

অডঙ চাকমা, ১০ জানুয়ারী ২০১২

টাকা পাঠানো ঠিকানা :
রবিন চাকমা,
সঞ্চয়ী হিসাব নং-৪১১৮, সোনালী ব্যাক লিমিটেড
বনরূপা শাখা, রাংগামাটি।

বাবু বকুল চন্দ্র চাকমা
সঞ্চয়ী হিসাব নং-১০৮৩
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক
পানছড়ি শাখা, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা।

 

বিদ্রঃ- যারা বিদেশে আছেন তারা Western Union এ টাকা পাঠাতে পারবেন।  যারা Western Union টাকা পাঠাতে আগ্রহী তারা RABIN CHAKMA নামে পাঠাতে পারবেন এবং নিচের মোবাইল নম্বর এ  MTCN নম্বর  sms করে পাঠিয়ে দিন।

Name:- RABIN CHAKMA

Cell No:- +8801556-700946


 

প্রচারনায়ঃ- সিএইচটি বিডি

এই মানবিক আবেদনটি লেখা হয়েছে News.chtbd

Share This Post

Post Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.